সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

https://dmmsoftware.top/

Please visit : https://dmmsoftware.top/ 

Hearts of Brooklyn

 🥀 Hearts of Brooklyn

📍 অধ্যায় ১: একটি হঠাৎ দেখা

ব্রুকলিনের একটি ঠান্ডা সন্ধ্যা। বাতাসে কুয়াশার ছোঁয়া, রাস্তার ধারে কফিশপ থেকে উড়ে আসা কফির উষ্ণ গন্ধ আর রাস্তার পাশে পড়ে থাকা শুকনো পাতার মর্মর শব্দ। জুলিয়া হার্পার, একা হেঁটে যাচ্ছে ব্যস্ত রাস্তা ধরে। গায়ে ছিল তার একটি পুরনো কোট, চোখে ছিল ক্লান্তি, আর মনে ছিল হাজারো না বলা কথা।

সে ঠিক বুঝতেও পারেনি, এই বিশাল শহরের মাঝে আজ এমন একজনের সঙ্গে দেখা হবে, যাকে সে ভেবেছিল চিরতরে হারিয়ে গেছে।

আচমকা, একটি চেনা কণ্ঠস্বর পেছন থেকে ডাক দিল— “Julia?”

সে থমকে দাঁড়াল।

তার চোখ ধীরে ধীরে ঘুরে গেল পেছনে। এক মুহূর্ত যেন স্থির হয়ে গেল। শ্বাস আটকে গেল বুকের মাঝে।

সামনে দাঁড়িয়ে ইথান ওয়াকার। পাঁচ বছর পর।

ইথান, যার সাথে জুলিয়ার প্রেম শুরু হয়েছিল কলেজে। তারা একসাথে স্বপ্ন বুনেছিল, ভবিষ্যতের গল্প সাজিয়েছিল। কিন্তু জীবন সব সময় সরল পথে হাঁটে না। একটা ভুল বোঝাবুঝি, কিছু না বলা কথা, আর আত্মঅহংকার— এইসব মিলিয়ে তারা দূরে সরে গিয়েছিল।

ইথান এখন আগের থেকে অনেক বেশি পরিণত দেখাচ্ছে। পরনে ধূসর ওভারকোট, চোখে একটু বিষণ্ণতা, কিন্তু সেই চেনা উষ্ণ হাসিটা ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে।

“তুমি কেমন আছো?” ইথান জিজ্ঞেস করল, একটু ধীর কণ্ঠে।

জুলিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “ভালো।” কিন্তু তার চোখ বলছিল অন্য কথা। পাঁচ বছর ধরে জমে থাকা কষ্ট, প্রশ্ন আর না বলা ভালোবাসা একসাথে ঢেউয়ের মতো বুকে আঘাত করছিল।

“তুমি এখানে কী করছো?”

ইথান মুচকি হেসে বলল, “তোমার খোঁজে এসেছি... ঠিক বললে, হয়তো নিজের হারানো অংশটার খোঁজে।”

জুলিয়া অবাক। “পাঁচ বছর পরে?”

“তোমাকে ভুলে থাকা সহজ ছিল না, জুলিয়া।”

তারা দুজনেই কিছুক্ষণ নীরব দাঁড়িয়ে থাকল। আশেপাশে গাড়ির হর্ন, মানুষের চলাচল, রাতের আলো— সবকিছু থেমে গেছে যেন। শুধু তারা দুজন, অতীত আর বর্তমানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে।

ইথান এগিয়ে এসে বলল, “এক কাপ কফি? ঠিক যেভাবে আগে খেতাম?”

জুলিয়া একটু হেসে বলল, “চলো।”

তারা হাঁটতে শুরু করল সেই পুরনো ক্যাফের দিকে, যেখানে তাদের প্রেমের শুরু হয়েছিল। রাস্তার বাতিগুলো ঝিমঝিম করছিল, আর সেই রাতটা আবারও এক নতুন গল্পের সূচনা করতে যাচ্ছিল।

📍 অধ্যায় ২: স্মৃতির খেয়া

পুরনো সেই কাঠের টেবিল, জানালার পাশে বসা, কফির ধোঁয়া আর শীতের হালকা আলো— যেন তাদের কলেজ জীবনের প্রতিচ্ছবি ফিরে এসেছে। ক্যাফেটি এখনও আগের মতোই আছে, শুধুমাত্র দেয়ালের রঙটা বদলেছে।

“তুমি জানো?” ইথান চুপ করে বসে থেকে বলল, “এই টেবিলেই আমি তোমাকে প্রথম ভালোবাসি বলেছিলাম।”

জুলিয়ার মুখে এক চিমটি হাসি। “আর আমি ভেবেছিলাম তুমি মজা করছো।”

“না, তখনকার প্রতিটা কথা আমার সত্যি ছিল। আজও আছে।”

জুলিয়া কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, “সবকিছু কি ফিরে আনা যায়?”

ইথান তাকিয়ে রইল তার দিকে। “সব না। কিন্তু যা সত্যি ছিল, যা হৃদয় থেকে এসেছিল— সেগুলো কখনও মরে না।”

কথাগুলো জুলিয়ার হৃদয়ে ঢুকে গেল। এক মুহূর্তে সে যেন আবার সেই পুরোনো দিনগুলোতে ফিরে গেল— কলেজের করিডোর, লাইব্রেরিতে লুকিয়ে চিঠি আদান-প্রদান, প্রথম ছুঁয়ে দেখার লজ্জা মাখা অনুভূতি।

“তুমি এখন কী করো?” জুলিয়া জিজ্ঞেস করল।

“আমি এখন ব্রুকলিনেই একটা ছোট ডিজাইন ফার্ম চালাই। নিজের মতো করে বাঁচি। কিন্তু সব কিছু ঠিক মনে হয় না… তুমিহীনতা একটা ফাঁকা জায়গা রেখে দিয়েছে সবকিছুর মাঝেই।”

জুলিয়া একটু থেমে বলল, “আমি লেখালিখি করি এখন। ছোট ছোট গল্প লিখি। কিন্তু বড় গল্পটা… থেমে গিয়েছিল।”

ইথান বলল, “চলো তবে, বড় গল্পটা আবার শুরু করি।”

তাদের চোখে চোখ পড়ে। সেই পুরোনো উষ্ণতা, ভালোবাসা আর একটা নতুন সম্ভাবনার চিহ্ন।

বাইরে রাত আরও গভীর হচ্ছে। কিন্তু ভিতরে, তাদের মাঝে আবার আলো জ্বলে উঠছে।

📍 অধ্যায় ৩: ভুল বোঝাবুঝি

পরের দিনগুলো ছিল অদ্ভুত রকমের সুন্দর আর অস্থিরতায় ভরা। ইথান আর জুলিয়া প্রায়ই দেখা করতে লাগল—কখনো ব্রুকলিন ব্রিজের ধারে, কখনো পুরোনো পার্কে, যেখানে একসময় তারা ঘন্টাখানেক বেঞ্চে বসে থেকেছিল একে অপরের হাতে হাত রেখে।

কিন্তু সময় যতই এগোয়, অতীতের দাগগুলো যেন আবার জেগে উঠতে থাকে।

“তুমি কেন তখন আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলে?” একদিন জুলিয়া হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে ফেলে।

ইথান একটু থেমে বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি আর আমাকে চাও না। তুমি যে আমার খোঁজ করছো, সেটা জানতাম না।”

“তুমি একটা চিঠিও লিখতে পারতে।”

“তুমিও তো কিছু বলোনি।”

এই বিনিময়ে কিছু মুহূর্ত চুপচাপ কেটে যায়। দুজনেই বুঝতে পারে—ভালোবাসা থাকলেও, না বলা কথাগুলো মাঝে দেয়াল তুলে দেয়।

তবুও, এবার তারা কথা থামায় না। ইথান আর জুলিয়া একে অপরকে তাদের দুঃখ, রাগ আর ভয়ের গল্প বলতে থাকে। চোখে জল আসে, কিন্তু এই জল ছিল নিরাময়ের।

📍 অধ্যায় ৪: চিঠির অপেক্ষা

এক সন্ধ্যায়, ইথান বলে, “আমি কিছুদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। কিন্তু তোমার জন্য একটা চিঠি রেখে যাবো।”

চিঠিতে সে লিখে—

"তুমি যদি এখনো বিশ্বাস করো, আমি ঠিক তোমার জন্য অপেক্ষা করব ব্রুকলিন ব্রিজের ওখানে, রোববার সন্ধ্যায়। যদি না আসো, বুঝে নেবো, আমাদের গল্পটা সেখানেই শেষ। কিন্তু আমি আশায় থাকবো..."

রোববার আসে।

জুলিয়া সারা দিন দ্বিধায় ভোগে। যাবে? নাকি সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে?

শেষমেশ, সে নিজের লেখা পুরোনো একটা ডায়েরি খুলে দেখে—ইথানের কথা, ভালোবাসার কথা, সেই হাসিগুলো যা একদিন তার হৃদয়ে আলো জ্বালিয়েছিল।

সে উঠে দাঁড়ায়।

📍 অধ্যায় ৫: ভালোবাসার ফিরে আসা

ব্রুকলিন ব্রিজের বাতিগুলো তখন ধীরে ধীরে জ্বলছে। বাতাসে হালকা ঠান্ডা, আর আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে ইথান—একগুচ্ছ সাদা গোলাপ হাতে।

তার চোখ বারবার রাস্তার দিকে যায়। প্রতীক্ষা। একরাশ আশা আর একফোঁটা ভয়।

আর তখনই, ধীরে ধীরে হেঁটে আসে জুলিয়া।

চোখে জল, কিন্তু ঠোঁটে এক চিমটি হাসি।

ইথান এগিয়ে আসে, ফুল তুলে ধরে। “আমি জানতাম তুমি আসবে।”

জুলিয়া বলে, “ভালোবাসা এত সহজে শেষ হয় না।”

তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। শহরের কোলাহল থেমে যায়, শুধু হৃদয়ের শব্দ শোনা যায়।

হারানো ভালোবাসা ফিরে এসেছে, আরও গভীর হয়ে, আরও সত্য হয়ে।

(শেষ)

মন্তব্যসমূহ