সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

https://dmmsoftware.top/

Please visit : https://dmmsoftware.top/ 

শেষ চিঠির শুরু

 📖 গল্পের নাম: শেষ চিঠির শুরু ✍️ ধরণ: দূরত্বের প্রেম, ভুল বোঝাবুঝি, দুই দেশের বাস্তবতা


অধ্যায় ১: নিউ ইয়র্কের ভোরে

নিউ ইয়র্ক শহরের এক ব্যস্ত সকালে কাঁচের জানালার পাশে বসে আছে নভেরা হুদা। বয়স ছাব্বিশ, বাংলাদেশি-আমেরিকান লেখিকা, যার জীবনের গল্প রয়ে গেছে এক পুরনো চিঠির খামে। সে ধীরে ধীরে লিখছে ঠিকানা:

"আরিফ হোসেন বাড়ি নং ৩১, রোড নং ৫, ধানমন্ডি, ঢাকা"

তিন বছর আগে, যখন সে ঢাকা ত্যাগ করেছিল, তখনও সে আরিফকে ভালোবাসত। কিন্তু বলার সুযোগ হয়নি। বলেছিল শুধু, “তোমার একদিন বুঝে যাবে কেন আমি চলে যাচ্ছি।” সেই একটা লাইনেই থেমে ছিল তাদের প্রেমের গল্প। আজ আবার শুরু করতে চায় নভেরা।

সে লিখে:

"প্রিয় আরিফ,

তোমার শহরে তিনটা বসন্ত চলে গেছে, কিন্তু আমার মনে তুমি রয়ে গেছ আগের মতোই। জানি না তুমি এখন কোথায়, কেমন আছো। কিন্তু আমি এখনো প্রতিদিন তোমার কথা ভাবি। আজ আমি আবার কলম ধরেছি, শুধু জানতে চাই, তুমি কি আজও মনে রাখো আমাদের সেই দিনগুলো?

– নভেরা"

চিঠিটা সে বারবার পড়ে, হাত থেমে থাকে খামের ওপর। পাঠাবে? না কি সময়ের ভয়ে আবার গুটিয়ে নেবে নিজেকে?


অধ্যায় ২: ঢাকার এক বিকেল

ধানমন্ডির বিকেলে বইমেলার ভিড় থেকে ঘরে ফিরে আরিফ হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাষক, কবি ও সাহিত্যপ্রেমী। তার টেবিলে পড়ে আছে একটা বিদেশি খাম। প্রেরক: নভেরা হুদা।

তার বুক ধকধক করে ওঠে। চোখে যেন ভেসে উঠে সেই মেয়েটার মুখ, যে ক্লাসে প্রশ্ন করেছিল, "স্যার, আপনার কবিতাগুলো কি আপনার জীবনের গল্প?" সে দিন থেকেই শুরু হয়েছিল কিছু অনুভবের যাত্রা।

চিঠিটা খুলে পড়ে আরিফ। প্রতিটি শব্দ যেন হৃদয়ে ছুরি চালায়।

সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিখে:

"নভেরা,

তুমি ঠিক আগের মতোই লিখো। তোমার শব্দের ভেতর আমি নিজেকে খুঁজে পাই। অনেক কথা ছিল, বলা হয়নি। হয়তো এই চিঠিই সেই শুরু। যদি তোমার সাহস থাকে, আমি অপেক্ষা করব...

– আরিফ"


অধ্যায় ৩: পুরোনো ডায়েরির পাতা

নভেরা চিঠি পাঠিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকে। হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে তার পুরোনো ডায়েরি। সেখানে শেষ লেখা ছিল: “আরিফ আমাকে ভুল বুঝেছে, কিন্তু আমি চিরদিন ভালোবাসব।” চোখ ভিজে আসে তার।

সেই দিনটির কথা মনে পড়ে, যখন তারা একসাথে বইমেলায় ঘুরে বেড়িয়েছিল। আরিফের হাতে ধরা ছিল রবীন্দ্রনাথের “শেষের কবিতা”, আর নভেরা বলেছিল, “তুমি যদি একদিন চলে যাও, আমি তোমাকে এই বইটা দিয়ে মনে রাখব।”

নভেরা আজ বুঝতে পারে, সময় সব কিছুর উত্তর দেয় না, কিছু প্রশ্ন রেখে দেয় উত্তরহীন।


অধ্যায় ৪: পুনর্মিলনের চিঠি

আরিফ চিঠির উত্তর দিয়েছিল। তিন সপ্তাহ পর, সেই চিঠি হাতে পেল নভেরা। ভিতরে লেখা ছিল:

"নভেরা,

তুমি ফিরে এসো, শুধু একবার। আমরা আবার হাঁটব ধানমন্ডি লেকের ধারে, আবার তুমি বলবে, 'এই গোধূলি তোমার কবিতার মতো রঙিন।' আমি এখনো লিখি, কিন্তু শব্দেরা আজও তোমার খোঁজে। যদি সাহস থাকে, নিউ ইয়র্কে থেকো না। এসো, শুরু করি আবার...

– আরিফ"


অধ্যায় ৫: আগমনের দিন

নভেরা ফিরে আসে বাংলাদেশে। তিন বছর পর। ঢাকার বাতাসে এক চেনা গন্ধ, ভীড়েও সে খুঁজে ফেরে আরিফের মুখ। ধানমন্ডি লেকে দেখা হয়, ঠিক সেই বেঞ্চের পাশে।

আরিফ দাঁড়িয়ে ছিল, হাতে 'শেষের কবিতা', চোখে জল।

নভেরা আস্তে এসে বলে, “আমি এসেছি, এবার আর চিঠি নয়... এবার সত্যি তুমি আর আমি।”

আরিফ হাত বাড়িয়ে বলে, “চলো, এবার শুরু হোক আমাদের গল্প, শেষ চিঠির পরে।”


অধ্যায় ৬: নতুন শুরু

তাদের পুনর্মিলনের পর কেটেছে ছয় মাস। এবার আর চিঠি নয়, তারা একসাথে দিন শুরু করে কফির টেবিলে, বইমেলার গেট দিয়ে, কিংবা ধানমন্ডির কোনো ছোট্ট ক্যাফেতে।

নভেরা ঢাকায় ফিরে একটি প্রকাশনা সংস্থায় যোগ দেয়। সে নিজের লেখা উপন্যাস নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আরিফ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে প্রেম ও জীবনের গল্প বলে। তারা প্রতিদিন নতুন কিছু শিখে — একে অপরকে নিয়ে।

একদিন, নভেরা তার নতুন বইয়ের নাম রাখে— “শেষ চিঠির শুরু”। সেই বই উৎসর্গ করে:

"আরিফের জন্য, যে আমার সব চিঠির উত্তর।"

বইমেলায় বই প্রকাশের দিন, আরিফ এসে বলে, “তোমার গল্পগুলো এখন সত্যি, কারণ তুমি পাশে আছো।”

নভেরা হাসে।

তার চোখে আলো। আরিফের চোখে ভরসা। আর তাদের গল্পে— কোনো সমাপ্তি নেই।


📘 [সমাপ্তি]

মন্তব্যসমূহ