সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

https://dmmsoftware.top/

Please visit : https://dmmsoftware.top/ 

তুমি আছো কোথায়?

 গল্পের নাম: তুমি আছো কোথায়? 

অধ্যায় ১: বোস্টনের আকাশে রাইজা

বোস্টনের এক গ্রীষ্মের বিকেল। আকাশে মেঘ, হালকা হাওয়া। রাইজা রহমান, ২৭ বছর বয়সী ফটোগ্রাফার, জানালার পাশে বসে তার ল্যাপটপ স্ক্রিনে চোখ রাখে। সামনে একটা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ছবি—পুরনো ঢাকার এক গলি। ছবিটা সে তুলেছিল তিন বছর আগে, যখন প্রথমবার বাংলাদেশ গিয়েছিল তার মায়ের অনুরোধে।

রাইজা বোস্টনে জন্ম, বোস্টনেই বড় হওয়া। কিন্তু তার মা, সানজিদা আহমেদ, এখনো বাংলাদেশের সংস্কৃতি বুকে আগলে রেখেছেন। “তোমার শিকড় জানতে হবে,” মা প্রায়ই বলেন।

রাইজার জীবনে অনেক কিছুই অগোছালো। কিছু মাস আগে তার ছয় বছরের সম্পর্ক ভেঙে যায় ড্যানিয়েল ব্ল্যাকের সঙ্গে। একে অপরকে ভালোবাসলেও, সংস্কৃতি আর জীবনদর্শনের ফারাক সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে দেয়নি।

আজ তার মায়ের একটা হঠাৎ ফোন—“তুমি দেশে এসো রাইজা। এবার না আসলে হয়তো আর দেখা হবে না।”

রাইজা ভেতরে ভেতরে টালমাটাল হয়ে যায়। দেশে যাওয়া মানে শুধু ছুটি নয়—পুরো একটা নতুন পৃথিবীতে ডুব দেয়া। সে জানে, এই সফরে তার জীবন বদলে যেতে পারে।


অধ্যায় ২: রাজশাহীর কবি

রাজশাহীর এক কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে, আরিয়ান হোসেন তার প্রিয় চা দোকানে বসে লিখছে নতুন একটা কবিতা। তার খাতা ভর্তি ছন্দ, অথচ মনে চলছে অন্য রকম এক ঝড়।

“তুমি আছো কোথায়? তোমার অনুপস্থিতি আমার কবিতার শূন্যতা।”

আরিয়ান সাহিত্যের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ার। বন্ধুদের মতে, সে "পুরনো যুগের ছেলে"—কবিতা ভালোবাসে, হাতে খাতা রাখে, এখনো স্লো মোশন ভালোবাসায় বিশ্বাস করে।

তার জীবনে প্রেম ছিল, হারিয়েও গেছে। তবে আজকাল সে আর প্রেমের খোঁজে নেই। তবে সেদিন যখন তার কাকা তাকে বলেন, “আমার এক বন্ধুর মেয়ে আমেরিকা থেকে আসছে। ও অনেক আধুনিক, তোকে ওর গাইড হতে হবে কিছুদিন”—তখন সে শুধুই হাসে।

“একটা শহরের মেয়ে গ্রামের কবির সঙ্গে কতটা মিলবে বলো তো?” সে ভাবে।

কিন্তু জীবন তো গল্পের মতোই আচমকা মোড় নেয়…


অধ্যায় ৩: দেখা প্রথমবার

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে রাইজা ভেবেই পাচ্ছিল না, সে কীভাবে তার অতীতকে সামলাবে। নিজের শেকড়ের দেশে ফিরেছে, কিন্তু সবকিছুই অচেনা। কাকারা এসে তাকে গ্রহণ করলেন। রাজশাহীতে পৌঁছতে আরও একদিন লেগে গেল।

আরিয়ান তাদের বাড়ির গেটেই দাঁড়িয়ে ছিল। কাকাতো ভাইয়ের পরিচয়ে দেখা হলো তাদের প্রথম। রাইজা একটু চুপচাপ, চোখে কৌতূহল। আরিয়ান কেবল হাসল, “আমি আরিয়ান। এই ক’দিন তোমার রাজশাহী সফরের সাথী।”

তাদের কথোপকথন প্রথমে খুব আনুষ্ঠানিক ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে, পাখিদের ডাক, নদীর পাড়, কুয়াশাভেজা সকালের চা – সব কিছুতেই এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হচ্ছিল।


অধ্যায় ৪: পার্থক্যের পর্দা

রাইজা একদিন জিজ্ঞেস করল, “তুমি কবিতা লেখো কেন?”

আরিয়ান মৃদু হেসে বলল, “কারণ শব্দ আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।”

এই কথাটা শুনে রাইজার চোখে যেন অদ্ভুত এক মুগ্ধতা ফুটে উঠল। সে কখনো এমন কাউকে চিনতো না যে অনুভবের ভাষায় কথা বলে। কিন্তু এ-ও ঠিক, তাদের চিন্তাধারায় ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

রাইজা ছিল বাস্তববাদী, ক্যামেরায় জীবন ধারণ করত। আরিয়ান ছিল স্বপ্নবাজ, শব্দে বাস্তব রাঙাত।

তাদের বন্ধুত্ব গভীর হচ্ছিল। কিন্তু একটা দেয়াল তখনো ছিল—একটা অজানা ভয়, কোনো একদিন হয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।


অধ্যায় ৫: হৃদয়ের দ্বন্দ্ব

রাইজা বুঝতে শুরু করে, সে এই ছেলেটির পাশে সময় কাটাতে ভালোবাসে। কিন্তু তার যুক্তিবাদী মন বারবার বলে, “এটা কোনো বাস্তব সম্পর্ক হতে পারে না। তুমি তো আবার বোস্টনে ফিরে যাবে।”

আরিয়ানও জানত, এই সম্পর্কের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি নেই। তবে তার কবিতা ধীরে ধীরে রাইজার নাম নিয়েই জন্ম নিতে লাগল।

একদিন হঠাৎ শহরের মেলায়, তাদের একসঙ্গে হাসতে দেখা গেল। আরেক বন্ধু খুশিতে বলল, “তোমাদের তো মানায় রে!”

রাইজা হেসে বলল, “তুমি জানো, আমিও সেটা ভাবছি।”


অধ্যায় ৬: বিদায়ের প্রস্তুতি

যখন রাইজার ফেরার সময় এলো, রাজশাহীর আকাশে যেন অদ্ভুত বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল। আরিয়ান কবিতার খাতা বন্ধ করে বসে থাকল। রাইজা একদিন তার কক্ষে এসে বলল, “আমি আবার ফিরবো।”

“জানো, আমি তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছি। চাই তুমি বোস্টনে গিয়েও সেটা পড়ো।” আরিয়ান বলল।

চোখ ভিজে আসে দুজনের। আলতো করে রাইজা তার হাত ছুঁয়ে বলে, “তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে নিঃশব্দ বিপ্লব।”


অধ্যায় ৭: দূরত্ব ও চিঠির যাত্রা

বোস্টনে ফিরে গিয়ে রাইজা যেন নতুনভাবে জীবন দেখতে শুরু করে। কিন্তু তার ক্যামেরায় এখন আর পুরনো তীব্রতা নেই। মনে হয়, কোথায় যেন কিছু অনুপস্থিত।

হঠাৎ একদিন ডাকবাক্সে একটি চিঠি—বাংলায় লেখা।

“রাইজা, তুমি কি আছো? আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে বসি। জানি তুমি এখন অনেক দূরে, কিন্তু এই দূরত্বই আমাদের মাঝে সেতু হয়ে উঠুক। – আরিয়ান”

সেই থেকে চিঠি চালাচালি শুরু হলো।


অধ্যায় ৮: ফিরে আসা

দুই বছর পর, এক সকালে রাজশাহীর ট্রেন স্টেশনে একজন নামল। চোখে সানগ্লাস, হাতে ক্যামেরা। আরিয়ান ছুটে এল।

“তুমি এসেছো?”

“আমি বলেছিলাম, আমি ফিরব।”

তারা হাঁটতে থাকে সেই পুরনো পথ ধরে। আরিয়ান বলে, “এই দু’বছরে আমি শুধু তোমার জন্য লিখেছি।”

রাইজা বলে, “আর আমি তোমার জন্য জেনেছি—ভালোবাসা কখনো জায়গার উপর নির্ভর করে না, বরং সময়কে হার মানায়।”


শেষ অধ্যায়: তুমি আছো কোথায়?

আজ তারা একসঙ্গে রাজশাহীর নদীর পাড়ে বসে আছে। ক্যামেরা আর খাতা পাশে পড়ে আছে। আরিয়ান বলছে নতুন কবিতা:

“তুমি আছো কোথায়? আজ আর প্রশ্ন নয়, কারণ তুমি আমার পাশে।”

রাইজা হেসে মাথা রাখে তার কাঁধে। জীবন এখনো সহজ নয়, কিন্তু ভালোবাসা একে সহজ করে দিয়েছে।


মন্তব্যসমূহ