সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

https://dmmsoftware.top/

Please visit : https://dmmsoftware.top/ 

 

তুমি রবে নীরবে

প্রথম অধ্যায়: দেখা প্রথমবার

হলুদ বিকেলের আলো তখন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক মায়াবী ছায়া ফেলেছে। ছাত্রছাত্রীরা কেউ আড্ডা দিচ্ছে, কেউ লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করছে, কেউবা নিঃসঙ্গ হেঁটে চলেছে আপন মনে। এমন সময়, একটি কালো বিএমডব্লিউ ক্যাম্পাসের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকে আসে। সবাই চেয়ে দেখেগ্লাস নামিয়ে রাখা গাড়ির ভেতরে বসে আছে এক তরুণ, চোখে কালো সানগ্লাস, পরনে ব্র্যান্ডেড শার্ট। সবার দৃষ্টি টেনে নেয় তার ব্যক্তিত্ব, তার বিলাসিতা।

সে আয়ান রহমান, শহরের নামকরা ব্যবসায়ী পরিবারের একমাত্র সন্তান। বিলাসবহুল জীবন তার প্রতিদিনের বাস্তবতা, কিন্তু তার চোখে আজ এক ধরনের শূন্যতা। প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে, কিন্তু এই নতুন পরিবেশে যেন একা লাগছে।

অন্যদিকে, লাইব্রেরির করিডোর দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে সায়রা আহমেদ তার হাতে কিছু বই, পরনে সাধারণ সালওয়ার-কামিজ। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, সকালে ইউনিভার্সিটি, বিকেলে টিউশন, আর রাতের পড়াশোনাএভাবেই কেটে যায় তার দিন। ক্যাম্পাসে কারও সাথে বিশেষ বন্ধুত্ব নেই, কারণ তার সময় হয় না আড্ডা দেয়ার। তার লক্ষ্য একটাইলেখাপড়া শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া।

কিন্তু সেদিন একটি ঘটনা ঘটে, যা সায়রা বা আয়ান কেউই কল্পনা করেনি।

লাইব্রেরির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই বাতাসের ঝাপটায় সায়রার হাত থেকে বইগুলো নিচে পড়ে যায়। সে দ্রুত নিচু হয়ে বই তুলতে যায়, ঠিক তখনই পাশ দিয়ে যাওয়া আয়ানের গাড়ি ব্রেক কষে থামে। আয়ান জানালা দিয়ে তাকায়।

সায়রা মাথা তুলে তাকায়, এবং সেই মুহূর্তে যেন সময় স্থির হয়ে যায়।

দুই জোড়া চোখ আটকে যায় একে অপরের মাঝে।

কোনো কথা নেই, শুধু কিছু মুহূর্তের নীরবতা।

সায়রার গভীর চোখের দৃষ্টি আয়ানকে মুহূর্তেই আবিষ্ট করে ফেলে। এত সাধারণ পোশাক, এত সাদামাটা চেহারাকিন্তু তবুও কেন যেন সে দৃষ্টির মধ্যে একটা টান ছিল, একটা ব্যাখ্যাতীত আকর্ষণ।

ইটস ওকে?” আয়ান প্রথম কথা বলে।

সায়রা তখনো অবাক। এত দামি গাড়ি, এত অভিজাত মানুষজনের সঙ্গে তার কখনো মেলামেশা হয়নি। সে দ্রুত মাথা নেড়ে বলে, “হ্যাঁ, থ্যাংক ইউ।

সেই প্রথম দেখা।

কিন্তু সে দেখা যেন একটা নতুন গল্পের সূচনা করে।


দ্বিতীয় অধ্যায়: বন্ধুত্বের শুরু

সেই ঘটনার পরেও আয়ান সায়রাকে লক্ষ্য করতে থাকে। লাইব্রেরিতে সে প্রতিদিন আসে, এক কোণায় বসে মন দিয়ে বই পড়ে। ক্লাসে সবচেয়ে মনোযোগী ছাত্রীদের একজন সে।

কিন্তু একদিন, একটি বৃষ্টিস্নাত বিকেলে, তারা আবার মুখোমুখি হয়। ক্যাম্পাসের করিডোর দিয়ে হাঁটার সময় আয়ান দেখে, সায়রা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তার ছাতা নেই, কিন্তু সে ছুটতে চাচ্ছে না। যেন বৃষ্টির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চায়।

আয়ান কাছে গিয়ে ছাতাটা এগিয়ে দেয়।

সায়রা চমকে তাকায়।

তুমি ভিজে যাবে,” আয়ান বলে।

সায়রা মাথা নেড়ে মৃদু হাসে, “আমি অভ্যস্ত।

আয়ান অবাক হয়। এত সাধারণ জীবন, এত কম চাওয়াকেমন মেয়ে সে! তার আশেপাশের বিলাসবহুল মানুষগুলোর থেকে কত আলাদা!

সেদিন থেকেই শুরু হয় তাদের বন্ধুত্ব।


তৃতীয় অধ্যায়: ভালোবাসার অনুভূতি

আয়ান আর সায়রার বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। ক্লাসের পর একসঙ্গে ক্যান্টিনে বসে গল্প করা, লাইব্রেরিতে পাশাপাশি বসে পড়াশোনা করা, কখনো কখনো ছুটির পরও কিছু সময় একসঙ্গে কাটানোসবকিছুই এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে আসছিল।

একদিন আয়ান হঠাৎ বলল, “তুমি সবসময় এত গম্ভীর থাকো কেন?”

সায়রা হাসল, “গম্ভীর নই, শুধু বাস্তবতা মেনে নিয়েছি।

বাস্তবতা?”

হ্যাঁ, জীবন কঠিন আয়ান। তুমি আলাদা, তোমার জীবন আলাদা। আর আমি...”

তুমি অসাধারণ!” আয়ান মাঝখানে বলে ওঠে।

সায়রা বিস্মিত হয়ে তাকায়, কিন্তু কিছু বলে না।

আয়ান নিজেও বুঝতে পারে, সায়রার প্রতি তার অনুভূতি বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি।


চতুর্থ অধ্যায়: ভালোবাসার স্বীকারোক্তি

এক সন্ধ্যায়, ক্যাম্পাসের পাশের লেকের ধারে বসে আয়ান সায়রাকে বলল, “আমি তোমাকে ভালোবাসি।

সায়রা চুপ করে থাকে। কয়েক মুহূর্ত পর ধীরে বলে, “আমাদের পৃথিবী ভিন্ন, আয়ান।

ভিন্ন হলে কী হবে? আমি শুধু তোমাকে চাই।

সায়রা চোখ নামিয়ে বলে, “তোমার পরিবার আমাকে কখনো মেনে নেবে না। আমার জন্য তোমার সবকিছু ছাড়তে পারবে?”

আয়ান নিশ্চিতভাবে বলে, “পারবো।

কিন্তু ভাগ্য কি তাদের একসঙ্গে থাকার অনুমতি দেবে?


পঞ্চম অধ্যায়: কঠিন বাস্তবতা

আয়ানের পরিবার যখন জানতে পারে সে একজন মধ্যবিত্ত মেয়েকে ভালোবাসে, তখন তারা প্রচণ্ড রেগে যায়। আয়ানের বাবা স্পষ্ট বলে দেয়, “ওর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করো, নাহলে তুমি আমাদের পরিবারের অংশ থাকবে না।

আয়ান এক মুহূর্তও দ্বিধা না করে বলে, “আমি সায়রার সঙ্গে থাকব।

কিন্তু সায়রা কি চাইবে আয়ান তার সবকিছু হারিয়ে ফেলুক?

সায়রা সিদ্ধান্ত নেয়, সে নিজে থেকেই সরে যাবে...

একদিন হঠাৎ করেই সে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়, কোনো নোট বা কারণ ছাড়া।

আয়ান অনেক খোঁজে, কিন্তু সে আর ফিরে আসে না।


শেষ অধ্যায়: নীরব বিদায়

বছর কেটে যায়। আয়ান ক্যাম্পাসে ফিরে তাকিয়ে থাকে সেই লাইব্রেরির দিকে, যেখানে প্রথমবার সায়রার সঙ্গে দেখা হয়েছিল।

একদিন সে জানতে পারে, সায়রা দূরের এক শহরে গিয়ে চাকরি করছে, নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য।

তারা আর কখনো দেখা করেনি।

তবে ভালোবাসা? তা কি সত্যিই শেষ হয়?

নাকি থেকে যায় নীরব অনুভূতির মাঝে...

(সমাপ্ত)

 

মন্তব্যসমূহ