সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

https://dmmsoftware.top/

Please visit : https://dmmsoftware.top/ 

শিউলি ফুলের গন্ধে মোড়া প্রেম

 শিউলি ফুলের গন্ধে মোড়া প্রেম

প্রথম অধ্যায়: প্রথম দেখা

শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে মোড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। গাছের পাতায় শিশিরবিন্দু জমে আছে, দূর থেকে ভেসে আসছে রবীন্দ্রসংগীতের সুর। এমন সময় সায়ন প্রথমবারের মতো দেখল অনামিকাকে। একটি পুরাতন বই হাতে নিয়ে চারুকলার সামনের বেঞ্চে বসে পড়ছিল সে। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, পরনে শাড়ি, আর কপালে ছোট্ট একটি লাল টিপ।

সায়ন থমকে দাঁড়িয়ে গেল। চারপাশের সমস্ত শব্দ যেন মিলিয়ে গেল মুহূর্তেই। বুকের ভেতর ধুকধুক শব্দ বাড়তে লাগলো। সাহস করে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই অনামিকা চোখ তুলল, যেনো আগেই টের পেয়েছিল কারও উপস্থিতি।

“এই বইটা কি তোমার?” সায়ন প্রশ্ন করল, হাতে ধরা বইটির দিকে তাকিয়ে।

“হ্যাঁ, তবে তুমি পড়তে চাইলে নিতে পারো।” মৃদু হাসল অনামিকা।

সেই হাসি সায়নের হৃদয়ে গেঁথে গেল, যেন বহু বছর ধরে এই হাসির অপেক্ষাতেই ছিল।


দ্বিতীয় অধ্যায়: সম্পর্কের শুরু

সায়ন ও অনামিকার বন্ধুত্ব জমে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। বই পড়া, কবিতা লেখা, সিনেমা দেখা—এমন অনেক কিছুতেই তাদের মিল ছিল। এক বিকেলে তারা ধানমন্ডির লেকে বসে গল্প করছিল।

“তুমি জানো, শিউলি ফুলের গন্ধ আমার খুব প্রিয়?” অনামিকা বলল।

“কেন?”

“এই গন্ধের মধ্যে একটা বিষাদ আছে, আবার আশার ছোঁয়াও আছে। একদম আমার জীবনের মতো।”

সায়ন কিছু বলল না। সে জানত, অনামিকার জীবনে কিছু কষ্টের অধ্যায় আছে, যেগুলো সে সহজে প্রকাশ করতে চায় না।

তারা প্রতিদিন কথা বলত, গল্প করত, একসাথে সময় কাটাত। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্বের রূপ বদলাতে লাগল। একদিন বৃষ্টির দিনে চারুকলার সামনে তারা এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ করেই অনামিকা বলল,

“তুমি কি জানো, বৃষ্টির শব্দ আমাকে কেমন করে শান্ত করে?”

সায়ন মৃদু হাসল, “আমার তো মনে হয়, বৃষ্টির শব্দ আমাদের গল্পের নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা করবে।”


তৃতীয় অধ্যায়: ভালোবাসার স্বীকারোক্তি

এক রাতে, পূর্ণিমার আলোয় ঢাকা শহর স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছিল। হাতিরঝিলে হাঁটতে হাঁটতে সায়ন অবশেষে তার মনের কথা বলল।

“অনামিকা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

অনামিকা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। চোখের কোণে অদৃশ্য জলকণা জমেছিল।

“তুমি জানো, সায়ন, আমি ভালোবাসার কথা খুব সহজে বলতে পারি না। কিন্তু…”

“কিন্তু?”

“তোমার সাথে থাকলে মনে হয়, শিউলি ফুলের বিষাদভরা গন্ধেও ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।”

সায়নের চোখে আনন্দের ঝলক ফুটে উঠল। সেই রাতে তারা দু’জন চাঁদের আলোয় বসে অনেক কথা বলল। দু’জনেই জানত, তাদের ভালোবাসা গভীর, কিন্তু সামনে কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করছে।


চতুর্থ অধ্যায়: এক অজানা অধ্যায়

তাদের ভালোবাসার কাহিনী সহজ ছিল না। সময়ের সাথে বাস্তবতা এসে ধাক্কা দিল। অনামিকার পরিবার চাইছিল সে বিদেশে চলে যাক উচ্চশিক্ষার জন্য। অন্যদিকে, সায়ন চেয়েছিল ঢাকায় থেকে তার স্বপ্ন পূরণ করতে।

“তুমি কি অপেক্ষা করবে আমার জন্য?” অনামিকা জিজ্ঞেস করল।

সায়ন চুপ করে থাকল। অপেক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ, কিন্তু তা পালন করা কি এতটাই সহজ?

বিদায়ের সময় এলো। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অনামিকা সায়নের হাত শক্ত করে ধরে বলল, “তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো, তাহলে সময় আমাদের আবার মিলিয়ে দেবে।”

সায়ন কিছু বলল না, শুধু মাথা নাড়ল। অনামিকা বিমানে উঠে গেল, সায়ন দাঁড়িয়ে রইল, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে।


পঞ্চম অধ্যায়: দূরত্বের কষ্ট

বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম কিছুদিন চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই চিঠির সংখ্যা কমতে লাগল। সায়ন অপেক্ষা করত, কিন্তু কোনো উত্তর আসত না।

একদিন অনামিকা লিখল, “সায়ন, সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে যায়, সম্পর্কও। আমি জানি না, আমাদের গল্পের শেষটা কেমন হবে, তবে আমি চাই তুমি সুখী থাকো।”

সায়নের হৃদয় ভেঙে গেল। সে বুঝতে পারল, বাস্তবতা তাদের সম্পর্ককে এক নির্মম পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।


শেষ অধ্যায়: শেষ চিঠি

বছর পেরিয়ে গেছে। শরতের সকালে, ক্যাম্পাসের সেই পুরনো বেঞ্চে বসে সায়ন একটি শিউলি ফুলের গন্ধ নিল। তার চোখে জল, মনে পড়ল অনামিকার বলা সেই কথা—

“শিউলি ফুলের গন্ধের মধ্যে বিষাদ আছে, আবার আশার ছোঁয়াও আছে।”

সেই মুহূর্তে তার মোবাইলে একটি নোটিফিকেশন এলো। একটি ই-মেইল।

“সায়ন,

আমি জানি, অনেক বছর কেটে গেছে, অনেক কিছু বদলে গেছে। কিন্তু আমি আজও বিশ্বাস করি, কিছু ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। তুমি কেমন আছো?”

সায়নের ঠোঁটে একটুখানি হাসি ফুটে উঠল। সে জানত, কিছু সম্পর্কের শেষ হয় না, শুধু সময়ের সাথে তারা নতুন রূপ নেয়।


শেষ হলেও শেষ নয়… ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, তা শুধু রূপ বদলায়।

মন্তব্যসমূহ