সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

https://dmmsoftware.top/

Please visit : https://dmmsoftware.top/ 

শেষ চিঠি

শেষ চিঠি

রাত্রি গভীর হচ্ছে। বৃষ্টি থেমে গেছে, কিন্তু জানালার কাচে এখনো জলকণা লেগে আছে। শহরের বাতাসে কেমন যেন এক বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক তেমনই বিষণ্ণ মনে জানালার পাশে বসে আছে অনিরুদ্ধ। হাতে ধরা একটা চিঠি, যেখানে কালি শুকিয়ে গেছে, কিন্তু অনুভূতিগুলো এখনো তাজা।

১.
অনিরুদ্ধ আর তৃষার পরিচয়টা খুব সাধারণভাবেই হয়েছিল—বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে। প্রথম দেখাতেই প্রেম ছিল না, কিন্তু একটা মায়া কাজ করেছিল। ধীরে ধীরে সেই মায়া ভালোবাসায় রূপ নেয়। দু’জনেই প্রতিজ্ঞা করেছিল, জীবন যত কঠিনই হোক, একে অপরের হাত ছাড়বে না।

কিন্তু জীবন কি সবসময় কথা রাখে?

২.
তৃষার পরিবার ছিল খুব রক্ষণশীল। বাবা-মা চেয়েছিলেন, তাদের মেয়ের একটা নির্দিষ্ট পথে জীবন চলুক—একজন ভালো পাত্র দেখে বিয়ে হোক, সংসার হোক। আর অনিরুদ্ধ? সে ছিল স্বপ্নবাজ এক তরুণ, যে চেয়েছিল নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে। ভালোবাসা থাকলেও বাস্তবতা ছিল কঠিন।

তৃষার বাবা-মা যখন জানতে পারলেন অনিরুদ্ধের সাথে তার সম্পর্ক, তখনই বাধ সাধলেন। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, এই সম্পর্ক তাদের মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

তৃষার মা বললেন, "তুমি কি আমাদের মুখ দেখাতে পারবে না? সমাজে আমাদের অবস্থান কী হবে?"

তৃষা বোবা হয়ে গেল। সে অনিরুদ্ধকে ভালোবাসে, কিন্তু বাবা-মায়ের কষ্টও সহ্য করতে পারে না।

৩.
এক সন্ধ্যায় অনিরুদ্ধ আর তৃষা দেখা করল শহরের পুরোনো কফিশপটায়। দু’জনের চোখেই ছিল বিষণ্ণতা।

"তুমি কি পরিবারকে ছেড়ে আমার সাথে যাবে?" অনিরুদ্ধ জিজ্ঞেস করল।

তৃষা চুপ করে রইল। সে ভালোবাসে অনিরুদ্ধকে, কিন্তু বাবা-মাকেও ছেড়ে যেতে পারবে না।

"আমি পারবো না, অনি… আমি খুবই দুঃখিত।" চোখ ভরে উঠল জলকণায়।

অনিরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

"তাহলে আজই শেষবারের মতো দেখা হচ্ছে?"

তৃষা কোনো উত্তর দিল না। শুধু হাতে তুলে দিল একটা চিঠি। "যখন সময় হবে, পড়ো," বলেই উঠে চলে গেল।

৪.
বছর কেটে গেল। তৃষার বিয়ে হয়ে গেল পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। অনিরুদ্ধ দূর থেকে শুধু দেখল, কিন্তু কিছুই বলতে পারল না। সময়ের সাথে সাথে সে নিজেকে কাজে ব্যস্ত করে তুলল, কিন্তু মনে কোথাও একটা শূন্যতা রয়ে গেল।

আজ এত বছর পর, সেই পুরনো চিঠিটা খুলে পড়ছে সে।

"অনিরুদ্ধ, তোমাকে ছেড়ে যেতে হবে, সেটা আমি জানতাম না। আমি চাইনি এটা হোক, কিন্তু জীবন আমাকে এমন এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে, যেখানে আমার পা কাঁপছে। আমি জানি, তুমি আমায় বোঝার চেষ্টা করবে, রাগ করবে না।

তুমি আমাকে ভুলে যাবে হয়তো, কিন্তু আমি জানি, আমার হৃদয়ে তুমি চিরকাল থাকবে। যদি একদিন আমাদের দেখা হয়, জানবে—আমি ভালোবাসতে পারিনি কাউকে, যেমন তোমাকে ভালোবেসেছি…

-তৃষা"

৫.
অনিরুদ্ধ জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। বৃষ্টির জলকণাগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে আসছে, কিন্তু তার চোখের কোনায় জমে থাকা অশ্রুগুলো এখনো গড়িয়ে পড়েনি।

তারপর সে ধীরে ধীরে ফোনটা হাতে নিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃষার প্রোফাইল খুঁজতে শুরু করল। সে এখন কোথায় আছে? কেমন আছে?

খুঁজে পেল। তৃষার একটি ছবি—তার পাশে একজন পুরুষ, আর ছোট্ট একটি মেয়ে।

অনিরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

হয়তো এটাই বাস্তবতা। হয়তো ভালোবাসা সবসময় একসাথে থাকার নাম নয়, কখনো কখনো কাউকে দূর থেকে ভালোবাসাই সত্যিকারের ভালোবাসা।

মন্তব্যসমূহ