সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

https://dmmsoftware.top/

Please visit : https://dmmsoftware.top/ 

অপ্রত্যাশিত প্রেম

 অপ্রত্যাশিত প্রেম

প্রথম পরিচয়

রাত তখন প্রায় ১১টা। ঢাকা শহরের ব্যস্ততা তখনও পুরোপুরি থামেনি, তবে তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। শাওন অফিস থেকে বাসায় ফিরছিল। সারা দিনের ক্লান্তি যেন শরীরের প্রতিটি কোষে চেপে বসেছে। হঠাৎ রাস্তার পাশে একটি ক্যাফের সামনে দাঁড়িয়ে গেল সে। ইচ্ছা ছিল না ঢোকার, কিন্তু অজানা এক আকর্ষণ যেন তাকে টেনে নিয়ে গেল।

ক্যাফের ভেতরে ঢুকে শাওন এক কোণার টেবিলে বসলো। একটু পরেই একজন ওয়েটার এসে অর্ডার নিলো। কিছুক্ষণ পর যখন কফি এলো, তখন সে খেয়াল করলো পাশে বসে থাকা একজন মেয়েকে। মেয়েটির চোখে ছিল একধরনের অদ্ভুত আকর্ষণ, যেন কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।

দ্বিতীয় দেখা

পরের সপ্তাহেই আবার সেই ক্যাফেতে যাওয়া হলো শাওনের। এবারও সেই মেয়েটি সেখানে বসে ছিল। দুজনের চোখাচোখি হলো, কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো না। হঠাৎ করে মেয়েটি শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি কি এখানে নিয়মিত আসেন?” শাওন একটু হেসে উত্তর দিলো, “নিয়মিত না, তবে মাঝে মাঝে আসা হয়।”

এভাবেই পরিচয় হলো তাদের। মেয়েটির নাম ছিল মেহরিন। সে ছিল একজন লেখক, কফিশপে বসে লেখালেখি করাই ছিল তার অভ্যাস। শাওন আইটি ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তির জগতে মগ্ন। দুজনের জগত সম্পূর্ণ আলাদা, কিন্তু কথার ফাঁকে এক অদ্ভুত সংযোগ তৈরি হলো।

সম্পর্কের সূচনা

প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে দুই-তিন দিন তাদের দেখা হতো। কফিশপের সেই নির্দিষ্ট কোণার টেবিলটাই যেন হয়ে উঠলো তাদের পরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দু। শাওন টেকনোলজি নিয়ে গল্প করতো, আর মেহরিন বলতো তার লেখা উপন্যাসের চরিত্রগুলোর কথা। এভাবেই ধীরে ধীরে তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লো।

ভালোবাসার স্বীকারোক্তি

এক সন্ধ্যায়, বৃষ্টি পড়ছিল মুষলধারে। মেহরিন তার ছাতাটা এগিয়ে দিলো শাওনের দিকে, কিন্তু শাওন হেসে বললো, “বৃষ্টিতে ভিজতেই আমার ভালো লাগে।”

মেহরিন একটু চুপ করে রইলো, তারপর বললো, “তোমাকে কিছু বলতে চাই।”

শাওন কৌতূহলী চোখে তাকালো। মেহরিন একটু লজ্জা পেয়ে বললো, “আমি কখনো ভাবিনি যে কারো সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে পড়বো। কিন্তু তুমি আমার জীবনে এক অপ্রত্যাশিত গল্পের মতো এসেছো, আর আমি চাই না এই গল্প শেষ হোক।”

শাওন কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেহরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমিও কখনো ভাবিনি যে প্রযুক্তির বাইরে কোনো মানুষ এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে আমার জীবনে। আমি চাই না আমাদের গল্পটাও শেষ হোক।”

সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ

সব সম্পর্কেই চ্যালেঞ্জ আসে, তাদের জীবনেও এল। শাওনের পরিবার চাইছিল সে বিদেশে চাকরির সুযোগ নিক, কিন্তু তার মন পড়ে ছিল ঢাকায়, মেহরিনের কাছে। অন্যদিকে মেহরিনের পরিবারও চাইছিল সে লেখালেখি ছেড়ে একটা “প্রপার” চাকরি করুক।

একদিন এক অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিলো শাওন। সে তার বিদেশের চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলো এবং মেহরিনকে বললো, “তোমার সঙ্গে থেকে আমি জীবনের গল্পটা লিখতে চাই।”

মেহরিন আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। সে বুঝলো, সত্যিকারের ভালোবাসা শুধু অনুভূতির নয়, বরং একে অপরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির।

একসাথে পথচলা

সময় গড়িয়ে গেল। মেহরিন একজন সফল লেখক হয়ে উঠলো, আর শাওন তার আইটি স্টার্টআপ চালু করলো ঢাকায়। একসঙ্গে পথচলার অঙ্গীকার তারা রেখেছিল, আর ভালোবাসার সেই অপ্রত্যাশিত গল্পটি পরিণত হলো এক অনন্য প্রেমের কাহিনিতে।

নতুন অধ্যায়

তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। একদিন, শাওন মেহরিনকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে যায়। মেহরিন প্রথমবার গ্রামে এসে নতুন এক জগৎ আবিষ্কার করলো। কাঁচা রাস্তা, সবুজ ধানক্ষেত, পাখির ডাক – শহরের ব্যস্ত জীবনের বাইরে এ যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি।

শাওনের মা মেহরিনকে খুব পছন্দ করলেন। তার সাথে গল্প করলেন, রান্নার রেসিপি শিখালেন। মেহরিন বুঝতে পারলো, এই ভালোবাসা শুধু শাওনের জন্য নয়, বরং তার পরিবারকেও আপন করে নেওয়া।

বন্ধনের দৃঢ়তা

বছরখানেক পরে, তারা নিজেদের সম্পর্কের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। পারিবারিক সম্মতি পাওয়ার পর, তারা একটি ছোট পরিসরের বিয়ের আয়োজন করলো। বিয়ের দিন মেহরিনকে দেখে শাওনের মনে হলো, এই সম্পর্ক শুধু প্রেম নয়, বরং এক জীবনের প্রতিজ্ঞা।

বিয়ের পরও তাদের ভালোবাসা অটুট থাকলো। মেহরিন নতুন নতুন গল্প লিখতে থাকলো, যেখানে শাওনের ছোঁয়া ছিল। শাওন তার স্টার্টআপকে আরও বড় করলো, আর তাদের সম্পর্ক সময়ের সাথে আরও দৃঢ় হয়ে উঠলো।

শেষ কথা

প্রেম কখনো পরিকল্পনা করে আসে না, অপ্রত্যাশিতভাবেই চলে আসে। শাওন আর মেহরিনের ভালোবাসা তারই এক অনন্য প্রমাণ। তাদের গল্প বলে দেয়, ভালোবাসা শুধুই অনুভূতির নয়, একে অপরের পাশে থাকার, স্বপ্ন ভাগাভাগি করার, আর একসাথে পথ চলার নাম।

মন্তব্যসমূহ